ন্যাপকিন দিদি’র হাত ধরে বদলাচ্ছে কেশপুরের ছবি

ন্যাপকিন দিদি’র হাত ধরে বদলাচ্ছে কেশপুরের ছবি

কয়েক বছর আগেও যাঁরা জানতেন না স্যানিটারি ন্যাপকিন কী, আজ তাঁরাই হয়ে উঠেছেন গ্রামের নারী স্বাস্থ্য সচেতনতায় অগ্রদূত। এলাকায় তাঁরা পরিচিত ‘ন্যাপকিন দিদি’ নামে।

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কেশপুর ব্লকের প্রত্যন্ত গ্রামের একদল মহিলা এখন নিজেরাই স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরি করছেন। শুধু নিজেরাই স্বনির্ভর হয়েছেন না, বরং অন্য মহিলাদেরও পিরিয়ড স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে সচেতন করছেন তাঁরা। এই উদ্যোগ শুরু হয়েছে কেশপুর ব্লক প্রশাসনের সহায়তায়।

বর্তমানে কেশপুর ১০ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের ‘দিশারী’, ১১ নম্বর কলাগ্রামের ‘সম্মেলনী’ এবং ১২ নম্বর সরিষাখোলার ‘উদিতা’—এই তিনটি স্বনির্ভর দলের ৩০ জন মহিলা প্রতিদিন শত শত স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরি করছেন। কেশপুরের মাথানিয়া এলাকার ‘মার্কেট হাট’-এ চলছে এই কাজ। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই মহিলারা নিষ্ঠা ও আত্মবিশ্বাস নিয়ে কাজ করে চলেছেন।

কেশপুরের সুষমা সাউ, মৌসুমি সাউ, শম্পা মণ্ডল, বিলকিস বিবি, বকুল মান্না ও শ্রীদেবী দোলই আজ হয়ে উঠেছেন তাঁদের গ্রামের মেয়েদের ভরসার জায়গা। সুষমা বলেন, “আগে জানতামই না এসব কী। এখন নিজেরা তৈরি করছি, আবার অন্যদেরও বলছি—পিরিয়ডস লজ্জার নয়, যত্নের বিষয়।”

প্রায় দেড় বছর আগে নদিয়ার কল্যাণীতে গিয়ে তাঁরা প্রথম প্রশিক্ষণ নেন। পরে প্রশিক্ষকেরা কেশপুরে এসে হাতে-কলমে শিক্ষা দেন। সেই শিক্ষার ফলেই আজকের এই উৎপাদন কেন্দ্র।

কেশপুরের বিডিও কৌশিস রায় বলেন, “আমরা জায়গা ও যন্ত্রপাতির সাহায্য দিয়েছি। আগামী দিনে এই প্যাড জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে সরবরাহ করার পরিকল্পনা রয়েছে। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা হয়ে গেছে।”

আজও গ্রামের অনেক মহিলা স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করেন না। পুরনো কাপড় ব্যবহার করার ফলে ইউটিআই, সারভিকাল ইনফেকশন এমনকি বন্ধ্যত্বের মতো সমস্যার ঝুঁকি বাড়ে। সেই প্রেক্ষাপটে এই মহিলাদের উদ্যোগ বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।

প্রতিটি সভা বা সমিতিতে, যেখানে মহিলাদের উপস্থিতি বেশি, তাঁরা বোঝানোর চেষ্টা করেন—স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার কতটা প্রয়োজনীয়। তাই তাঁরা শুধু ‘ন্যাপকিন দিদি’ নন, বরং এক একটি সচেতনতার দূত।

এই মহিলাদের হাত ধরে বদলাচ্ছে গ্রামের নারীদের দৃষ্টিভঙ্গি। তাঁদের প্রত্যাশা—প্রত্যেক মেয়ে ও মহিলা যেন নিজের শরীর ও স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দেন। মেনস্ট্রুয়েশন যে আর লজ্জার বিষয় নয়, কেশপুরের এই মহিলারা দেখিয়ে দিচ্ছেন, সচেতনতা ও স্বনির্ভরতার হাত ধরেই বদলানো সম্ভব সমাজের বহু পুরনো ট্যাবু।

তাঁদের বার্তা একটাই—স্বাস্থ্য হোক অধিকার, লজ্জা নয়!

Post a Comment

أحدث أقدم