পিরিয়ড সম্পর্কে যা জানা সবার জন‌্যই জরুরি

পিরিয়ড সম্পর্কে যা জানা সবার জন‌্যই জরুরি


পিরিয়ড বা মাসিক হল মহিলাদের জরায়ু থেকে তার যোনি দিয়ে রক্ত বের হওয়া। এটি একটি লক্ষণ যে সে বয়ঃসন্ধির শেষপর্বে পৌঁছেছে। পিরিয়ড সব মহিলার একটি স্বাভাবিক শরীরবৃত্তিয় কাজ হলেও, এ সম্পর্কে অনেকেরই সঠিক ধ‌্যান-ধারণা নেই। সে কারণে, পিরিয়ড সম্পর্কে অনেক কিছু জানার আছে।  কিশোর-কিশোরীদের মনেও অনেক সাধারণ প্রশ্ন রয়েছে। এখানে সাধারণ কিছু প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হল।

বেশিরভাগ মেয়ের পিরিয়ড কখন শুরু হয়?

বেশিরভাগ মেয়ের প্রথম পিরিয়ড হয় ১২ বছর বয়সে। কিন্তু ১০ থেকে ১৫ বছর বয়সের মধ্যে যে কোনও সময় পিরিয়ড শুরু হওয়া উচিত। তবে প্রতিটি মেয়েরই নিজ শরীর অনুযায়ী পিরিয়ড হওয়ার জন্যসঠিক বয়স নেই। কিন্তু পিরিয়ড শুরু হতে চলার কিছু আগাম সূত্র রয়েছে। যেমন– বেশিরভাগ সময় একটি মেয়ের স্তন বিকশিত হতে শুরু করার প্রায় দু’বছর পর পিরিয়ড হয়। আরেকটি চিহ্ন হল যোনি স্রাব তরল (এক প্রকার শ্লেষ্মা জাতীয়) যা একটি মেয়ে তার অন্তর্বাসে দেখতে বা অনুভব করতে পারে। এই স্রাব সাধারণত প্রথম মাসিক হওয়ার প্রায় ছয় মাস থেকে এক বছর আগে শুরু হয়।

পিরিয়ড হয় কেন?

শরীরে হরমোনের পরিবর্তনের কারণে পিরিয়ড হয়। হরমোন রাসায়নিক বার্তাবাহক। ডিম্বাশয় নারী হরমোন ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরন নিঃসরণ করে। এই হরমোনগুলি জরায়ুর (বা গর্ভ) আস্তরণ তৈরি করে। বিল্ট-আপ আস্তরণ একটি নিষিক্ত ডিমের সাথে সংযুক্ত হতে এবং বিকাশ শুরু করার জন্য প্রস্তুত। নিষিক্ত ডিম না থাকলে আস্তরণ ভেঙ্গে রক্তপাত হয়। তারপর এই প্রক্রিয়া পুনরাবৃত্তি হতে থাকে। আস্তরণ তৈরি হতে সাধারণত এক মাস সময় লাগে, তারপর ভেঙে যায়। এই কারণেই বেশিরভাগ মেয়ে এবং মহিলাদের মাসে প্রায় একবার তাদের পিরিয়ড হয়।

কিভাবে ডিম্বস্ফোটন পিরিয়ডের সাথে সম্পর্কিত?

ডিম্বস্ফোটন (Ovulation) হল ডিম্বাশয় থেকে একটি ডিম নিঃসরণ। একই হরমোন যা জরায়ুর আস্তরণ তৈরি করে এবং ডিম্বাশয়ের একটি ডিম্বাণুকে ছেড়ে দেয়। ডিম্বাণু একটি পাতলা টিউবের মধ্য দিয়ে, যাকে ফ্যালোপিয়ান টিউব বলে জরায়ুতে আসে। যদি ডিম্বাণু একটি শুক্রাণু কোষ দ্বারা নিষিক্ত হয়, তবে এটি জরায়ুর প্রাচীরের সাথে সংযুক্ত হয়, যেখানে সময়ের সাথে সাথে সেটি ভ্রুণে বিকশিত হয়। ডিম্বাণু নিষিক্ত না হলে, জরায়ুর আস্তরণ ভেঙ্গে রক্তপাত হয়, যার ফলে পিরিয়ড হয়।

পিরিয়ড শুরু হলে কি তা নিয়মিত হয়?

একটি মেয়ের মাসিক শুরু হওয়ার পর প্রথম কয়েক বছর  নিয়মিত নাও আসতে পারে। প্রাথমিকভাবে এটা স্বাভাবিক। প্রথম পিরিয়ডের প্রায় ২-৩ বছর পর, একটি মেয়ের পিরিয়ড প্রতি ৪-৫ সপ্তাহে একবার হওয়া উচিত।

মেয়েরা কি তার পিরিয়ড শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গর্ভবতী হতে পারে?

হ্যাঁ, একটি মেয়ে তার মাসিক শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গর্ভবতী হতে পারে। এমনকি তার প্রথম মাসিকের ঠিক আগে গর্ভবতী হতে পারে। কারণ তার হরমোন ইতিমধ্যে সক্রিয় হতে পারে। হরমোনগুলি ডিম্বস্ফোটন এবং জরায়ুর প্রাচীর তৈরি করতে পারে। যদি কোনও মেয়ে সেক্স করে তাহলে সে গর্ভবতী হতে পারে, যদিও তার কখনও পিরিয়ড হয়নি।

পিরিয়ড কতদিন স্থায়ী হয়?

পিরিয়ড সাধারণত প্রায় পাঁচ দিন স্থায়ী হয়। কিন্তু পিরিয়ড কম বা দীর্ঘ হতে পারে।

পিরিয়ড কত ঘন ঘন ঘটবে?

পিরিয়ড সাধারণত প্রতি ৪-৫ সপ্তাহে একবার হয়। কিন্তু কিছু মেয়ের পিরিয়ড একটু কম বা বেশি হয়।

পিরিয়ডের সময় কি প্যাড, ট্যাম্পন বা মাসিক কাপ ব্যবহার করা উচিত?

পিরিয়ডের রক্তের সঙ্গে কীভাবে ঘরে-বাইরে স্বাভাবিক কাজকর্মের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত রাখতে পারবেন তার অনেকগুলি অপশন রয়েছে। কোনটি আপনার জন্য সবচেয়ে ভাল কাজ করে সেটা বুঝতে আপনাকে কিছুটা পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে। কিছু মেয়ে শুধুমাত্র একটি পদ্ধতি ব্যবহার করে এবং অন্যরা বিভিন্ন পদ্ধতির মধ্যে পরিবর্তন করে। বেশিরভাগ মেয়ে পিরিয়ডের দিনগুলিতে স‌্যানিটারি প‌্যাড ব‌্যবহার করে। প্যাডগুলি তুলো দিয়ে তৈরি এবং বিভিন্ন আকার এবং মাপে আসে। প‌্যাডের আঠালো স্ট্রিপ অন্তর্বাসের সাথে সংযুক্ত থাকে, যা সরে যেতে দেয় না। অনেক মেয়ে আবার প্যাডের চেয়ে ট্যাম্পন বেশি সুবিধাজনক বলে মনে করে, বিশেষ করে খেলাধুলা বা সাঁতার কাটার সময়। ট্যাম্পন তুলোর প্লাগ যা একটি মেয়ে তার যোনিতে প্রবেশ করিয়ে রাখে। ট্যাম্পন রক্ত শুষে নেয়। একটি ট্যাম্পন আট ঘন্টার বেশি রেখে দেওয়া উচিত নয়, কারণ এটি বিষাক্ত শক সিন্ড্রোম নামে একটি গুরুতর সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে। পাশাপাশি, কিছু মেয়েদের মাসিক কাপ পছন্দ। বেশিরভাগ মাসিক কাপ সিলিকন দিয়ে তৈরি। মাসিক কাপ ব্যবহার করার জন্য সেটি যোনির মধ্যে প্রবেশ করানো হয়। এটি রক্ত ধরে রাখে।

পিরিয়ডের সময় কতটা রক্ত বের হয়?

একটি মেয়ে সাধারণত পুরো পিরিয়ডের সময় মাত্র কয়েক টেবিল চামচ রক্ত হারায়। বেশির ভাগ মেয়েকে তাদের প্যাড, ট্যাম্পন বা মাসিক কাপ দিনে প্রায় ৩-৬ বার পরিবর্তন করতে হয়।

মহিলাদের কি সারা জীবনই পিরিয়ড হয়?

যখন মহিলারা মেনোপজে পৌঁছায় (৪৫-৫৫ বছর বয়সের কাছাকাছি), তাদের পিরিয়ড স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায়। গর্ভবতী থাকাকালীনও মহিলাদের পিরিয়ড হয় না।

পিএমএস কী?

পিএমএস (প্রি-মেনস্ট্রুয়াল সিনড্রোম) হল যখন কোনও মেয়ের মানসিক এবং শারীরিক লক্ষণ যা তার প্রতিবার পিরিয়ডের আগে বা চলাকালীন ঘটতে পারে। এই লক্ষণগুলির মধ্যে মেজাজ, বিষণ্ণতা, উদ্বেগ, ফোলাভাব এবং ব্রণ ইত‌্যাদি রয়েছে। পিরিয়ডের প্রথম কয়েকদিন পর লক্ষণগুলো চলে যায়।

আমি শিরায় টান উফসমে কী করতে পারি?

অনেক মেয়েরই পিরিয়ডের সময় ক্র্যাম্প বা শিরায় টান ধরে, বিশেষ করে প্রথম কয়েকদিন। যদি ক্র্যাম্প অতিরিক্ত হয়, উপসমের জন‌্য পেটে হটব‌্যাগ (হালকা উষ্ণ) জিতে পারেন। তাছাড়া. আইবুপ্রোফেন (অ্যাডভিল, মোটরিন, বা স্টোর ব্র্যান্ড) বা নেপ্রোক্সেন (আলেভ বা স্টোর ব্র্যান্ড) নেওয়া যেতে পারে।

পিরিয়ডের সময় কি কোনও সমস্যা দেখা দিতে পারে?

বেশিরভাগ মেয়েরই পিরিয়ড নিয়ে কোনও সমস্যা হয় না। কিন্তু যদি সমস‌্যা হচ্ছে বোঝেন তবে অবশ‌্যই চিকিৎসকের পরামর্থ নিতে পারেন। 

পিরিয়ড প্রতিটি মেয়ের জীবনের একটি স্বাভাবিক, সুস্থ অংশ। তাদের ব্যায়াম করা, উৎফুল্ল থাকা এবং জীবন উপভোগ করা উচিত। আপনার যদি পিরিয়ড সম্পর্কে প্রশ্ন থাকে, তাহলে চিকিৎসক, বাড়ির অভিভাবক, স্বাস্থ্য শিক্ষক, স্কুলের নার্স বা বড় দিদিকে জিজ্ঞাসা করুন। মনের মধ্যে কোনও কুণ্ঠা না রেখে তাঁদের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করুন। 

(কেবলমাত্র সচেতনতা বৃদ্ধির জন‌্য ধারণা দেওয়ার হেতু। সব সমস্য‌ায় চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করুন)

Post a Comment

أحدث أقدم