পিরিয়ড চলাকালীন অপরিচ্ছন্ন ও অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য আমাদের দেশের বহু মহিলা প্রস্রাব সংক্রমণ ও জরায়ু মুখের ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। পিরিয়ড, মাসিক বা ঋতুস্রাব প্রতিটি সুস্থ নারীর জীবনে একটি স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। একজন নারীর নিয়মিত ও সঠিকভাবে ঋতুস্রাব হওয়ার অর্থ তিনি সন্তান ধারণে সক্ষম।
বিষয়টি স্বাভাবিক হলেও এটি নিয়ে আমাদের সমাজে দৃষ্টিভঙ্গি এখনও স্বাভাবিক নয়। ঋতুস্রাব নিয়ে আমাদের দেশের এই রাখঢাক পরিস্থিতিকে আরও শোচনীয় করে রেখেছে। লজ্জার কারণে অনেক নারীই পিরিয়ড সংক্রান্ত সমস্যাগুলি নিয়ে খোলাখুলি আলোচনাা বলতে পারেন না। সমস্যা আড়ালে থেকে যায়, তার প্রতিকার হয় না। এই অসচেতনতার কারণে পরবর্তীকালে জটিল সব রোগে আক্রান্ত হন মহিলারা।
একটা কথা সবসময় মনে কারখতে হবে যে নারীস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ও জটিলতা এড়াতে পিরিয়ড চালার সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অত্যন্ত জরুরি। এ সময় পরিচ্ছন্ন ও সচেতন থাকুন। মেনে চলুন কিছু নিয়মকানুন।
যে নিয়ম অবশ্যই মেনে চলতে হবে–
১) চার থেকে ছয় ঘণ্টা অন্তর স্যানিটারি প্যাড পরিবর্তন করুন।
২) কাপড়, তুলা বা টিস্যু ব্যবহার করবেন না।
৩) ওই বিশেষ দিনগুলিতে স্যানিটারি প্যাড বা মেনস্ট্রুয়াল কাপ ব্যবহার করুন।
৪) একসঙ্গে দুটি স্যানিটারি প্যাড পরবেন না।
৫) ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ এড়াতে পরিষ্কার অন্তর্বাস ব্যবহার করুন।
৬) প্রতিদিন স্নান করুন। ব্যবহৃত কাপড় পরিষ্কার রাখুন।
আরও কিছু নিয়ম মেনে চললে সমস্যা এড়ানো যাবে। যেমন–
১) পিরিয়ডের সময় চুলের গোড়া আলগা হয়ে যায়, ফলে লোমকূপ উন্মুক্ত হয়ে পড়ে। এ সময় চুলে শ্যাম্পু ব্যবহার না করাই ভালো। পিরিয়ড শেষ হওয়ার পর মাথায় শ্যাম্পু করুন।
২) প্যাড র্যাশ এড়াতে যথাসময়ে প্যাড পরিবর্তন করা এবং যোনিপথের আশপাশের জায়গা শুকনো রাখা প্রয়োজন।
৩) ব্যবহৃত কাপড় ও অন্তর্বাস পরিষ্কার করে ভালোভাবে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে।
৪) নিয়মিত ব্যবহারের ক্ষেত্রে সুতির আরামদায়ক অন্তর্বাস ব্যবহার করতে পারেন।
৫) যোনিপথের আশপাশে সুগন্ধী বা অ্যালকোহলযুক্ত কোনও কিছু ব্যবহার করা উচিত নয়।
৬) ব্যবহৃত স্যানিটারি প্যাড নির্দিষ্ট স্থানে ফেলুন।
৭) এ সময় জরায়ু অত্যন্ত সেনসিটিভ অবস্থায় থাকে, সামান্য আঘাতেও মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। খেয়াল রাখবেন যেন এ সময় পেটে কোনও আঘাত না লাগে।
৮) ভারী কাজ, ব্যায়াম, সাঁতার বা সাইকেল চালানো ওই দিনগুলিতে বন্ধ রাখুন।
৯) এ সময় হরমোনের প্রভাবে মানসিক ও শারীরিক বেশ কিছু পরিবর্তন ঘটে থাকে অনেক মহিলার ক্ষেত্রে। তাই মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তামুক্ত থাকার চেষ্টা করুন।
১০) পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার পাশাপাশি প্রচুর জল পান করুন।
অনিয়মিত পিরিয়ডসহ যে কোনও সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
(কেবলমাত্র সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ধারণা দেওয়ার হেতু। সব সমস্যায় চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করুন)
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন